ডেউয়া (ইংরেজিতে কাঠ শাঁকো) একটি প্রাচীন ফল যা আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি মোরাসিয়া পরিবারের অন্তর্গত একটি ফল যা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। ডেউয়া ফলের স্বাদ মিষ্টি এবং তেঁতো-মিষ্টি হয় এবং এটি পাকা অবস্থায় খাওয়া হয়।
ডেউয়ার প্রকারভেদ
ডেউয়া ফল প্রধানত দুই ধরনের হয়:
১. বুনো ডেউয়া: বুনো ডেউয়া সাধারণত বনাঞ্চলে পাওয়া যায় এবং এটি খুব বেশি বড় হয় না। এর স্বাদ কিছুটা তেঁতো।
২. চাষকৃত ডেউয়া: চাষকৃত ডেউয়া ফল সাধারণত বড় আকারের হয় এবং এর স্বাদ বেশি মিষ্টি।
নিয়মিত ডেউয়া খাওয়ার উপকারিতা
ডেউয়া ফলের অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত ডেউয়া খেলে আপনি পেতে পারেন নানান উপকারিতা, যেমন:
- উচ্চ পুষ্টিগুণ: ডেউয়া ফলে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার থাকে। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হাড়ের গঠন মজবুত করে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: ডেউয়া ফলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য প্রতিরোধ করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: ডেউয়া ফলে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকে যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
- হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি: ডেউয়া ফলে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- চোখের যত্ন: ডেউয়া ফলে ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে থাকে যা চোখের জন্য খুবই উপকারী। এটি দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
- ত্বকের যত্ন: ডেউয়া ফলে থাকা ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের বার্ধক্য রোধ করে।
ডেউয়া এর পুষ্টিগুণ
ডেউয়া ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানলে আপনার ডেইলি ডায়েটে এটি অন্তর্ভুক্ত করতে আগ্রহ বাড়বে। ১০০ গ্রাম ডেউয়া ফলে থাকে:
- ক্যালোরি: ৬৫ ক্যালোরি
- কার্বোহাইড্রেট: ১৫ গ্রাম
- প্রোটিন: ১ গ্রাম
- ফাইবার: ২ গ্রাম
- ভিটামিন সি: দৈনিক প্রয়োজনের ৩০%
- ভিটামিন এ: দৈনিক প্রয়োজনের ১০%
- ক্যালসিয়াম: ২০ মিলিগ্রাম
- আয়রন: ০.৫ মিলিগ্রাম
বয়সভেদে ডেউয়া খাওয়ার পরিমান
ডেউয়া ফলে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তবে ডেউয়া খাওয়ার পরিমাণ বয়সভেদে ভিন্ন হতে পারে। আসুন জেনে নিই, কোন বয়সের মানুষের কতটুকু পরিমাণ ডেউয়া খাওয়া উচিত।
শিশুরা (২-১২ বছর)
শিশুরা সাধারণত মিষ্টি ফল খুব পছন্দ করে। তবে তাদের ডেউয়া খাওয়ার পরিমাণ সীমিত রাখতে হবে, কারণ বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে।
- ২-৫ বছর: ৫০-৭৫ গ্রাম (প্রায় ১-২ টুকরো)
- ৬-১২ বছর: ৭৫-১০০ গ্রাম (প্রায় ২-৩ টুকরো)
কিশোর-কিশোরীরা (১৩-১৯ বছর)
এই বয়সের ছেলেমেয়েদের জন্য ডেউয়া খুবই উপকারী। এটি তাদের হাড়ের গঠন মজবুত করতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ১৩-১৫ বছর: ১০০-১৫০ গ্রাম (প্রায় ৩-৪ টুকরো)
- ১৬-১৯ বছর: ১৫০-২০০ গ্রাম (প্রায় ৪-৫ টুকরো)
প্রাপ্তবয়স্করা (২০-৫৯ বছর)
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ডেউয়া ফল খাদ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে পারে। এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের যত্নে সাহায্য করে।
- ২০-৩৯ বছর: ২০০-২৫০ গ্রাম (প্রায় ৫-৬ টুকরো)
- ৪০-৫৯ বছর: ১৫০-২০০ গ্রাম (প্রায় ৪-৫ টুকরো)
বয়স্করা (৬০ বছর এবং তার ঊর্ধ্বে)
বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডেউয়া খাওয়ার পরিমাণ একটু কম হওয়া উচিত। অতিরিক্ত ফল খেলে তাদের হজমে সমস্যা হতে পারে।
- ৬০ বছর এবং তার ঊর্ধ্বে: ১০০-১৫০ গ্রাম (প্রায় ৩-৪ টুকরো)
ডেউয়া খাওয়ার উপকারিতা
- ভিটামিন সি: ডেউয়া ফলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন এ: এটি চোখের জন্য খুবই উপকারী।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ডেউয়া ফলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- ফাইবার: হজমশক্তি বাড়াতে সহায়ক।
কখন ডেউয়া খাওয়া উচিত
ডেউয়া খাওয়ার সঠিক সময় জানলে আপনি এর পুষ্টিগুণ সবচেয়ে ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
- সকালে: সকালে খালি পেটে ডেউয়া খাওয়া ভালো, কারণ এটি শরীরের মেটাবোলিজম বৃদ্ধি করে এবং সারাদিন আপনাকে সতেজ রাখে।
- বিকেলে: বিকেলের নাস্তার সময় ডেউয়া খাওয়া যেতে পারে। এটি আপনাকে অতিরিক্ত ক্যালোরি থেকে রক্ষা করবে এবং হালকা খাবারের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
- ব্যায়ামের পরে: ব্যায়ামের পরে ডেউয়া খেলে শরীরের এনার্জি রিস্টোর হয় এবং পুষ্টির অভাব পূরণ হয়।
কিভাবে ডেউয়া খাওয়া উচিত
ডেউয়া খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি জানলে আপনি এর স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ সবচেয়ে ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন।
- কাঁচা খাওয়া: ডেউয়া ফল ভালো করে ধুয়ে কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। এটি সবচেয়ে সহজ এবং পুষ্টিকর উপায়।
- ফল সালাদে: বিভিন্ন ফলের সাথে ডেউয়া মিশিয়ে ফল সালাদ তৈরি করতে পারেন। এতে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়।
- জুস বা স্মুদি: ডেউয়া ফল জুস বা স্মুদি করে খাওয়া যায়। এটি স্বাস্থ্যকর এবং সতেজকর।
কোন কোন উপাদানের সাথে ডেউয়া খাওয়া উচিত
ডেউয়া ফল বিভিন্ন উপাদানের সাথে মিশিয়ে খেলে এর পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পায়।
- দই: দইয়ের সাথে ডেউয়া মিশিয়ে খেলে হজমে সহায়ক হয় এবং প্রোবায়োটিকস পাওয়া যায়।
- বাদাম: বাদামের সাথে ডেউয়া খেলে প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পাওয়া যায়।
- মধু: মধুর সাথে ডেউয়া মিশিয়ে খেলে এটি আরও সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর হয়।
কখন এবং কেন ডেউয়া খাওয়া উচিত না
কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে ডেউয়া খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- রাতে: রাতে ডেউয়া খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে এবং পেটের ব্যথা হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে: অতিরিক্ত ডেউয়া খেলে ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য: ডায়াবেটিস রোগীদের ডেউয়া খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ এতে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে।