মস্তিষ্কের ক্যান্সার কি?

মস্তিষ্কের ক্যান্সার হল এক ধরণের ক্যান্সার যা মস্তিষ্কের কোষগুলোতে বৃদ্ধি পায়। এটি মস্তিষ্কের মধ্যে অস্বাভাবিক কোষের দ্রুত বর্ধনের কারণে ঘটে। মস্তিষ্কের ক্যান্সারকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক ভাগে বিভক্ত করা যায়। প্রাথমিক ভাবে মস্তিষ্কের ক্যান্সার সরাসরি মস্তিষ্ক থেকে উৎপন্ন হয়, আর অন্যভাবে মস্তিষ্কের ক্যান্সার শরীরের অন্য কোনো অংশ থেকে মস্তিষ্কে ছড়ায়।

কী কারণে মস্তিষ্কের ক্যান্সার হতে পারে?

মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে কিছু কারণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে:

১. বংশগতির প্রভাব: পরিবারের কারো মস্তিষ্কের ক্যান্সার থাকলে অন্য সদস্যদেরও এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

২. রেডিয়েশন: মাথায় উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন থেরাপি নেওয়ার ফলে মস্তিষ্কের কোষে পরিবর্তন হতে পারে যা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

৩. বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা: কিছু রকমের রাসায়নিক বা বিষাক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা, যেমন ভিনাইল ক্লোরাইড, বেনজিন ইত্যাদি, মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৪. বাড়তি ওজন: স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন মস্তিষ্কের ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

৫. হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV): এই ভাইরাস মস্তিষ্কের কোষে পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

মস্তিষ্কের ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কি কি?

১. মাথাব্যথা: মস্তিষ্কের ক্যান্সারের প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ হল তীব্র মাথাব্যথা। এটি সাধারণত সকালে বা রাতে বেশি হয়।

২. বমি বমি ভাব এবং বমি: অনেক সময় মাথাব্যথার সঙ্গে বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে।

৩. চোখের সমস্যা: দৃষ্টিশক্তির সমস্যা, যেমন ধোঁয়া দেখা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি মস্তিষ্কের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।

৪. মানসিক পরিবর্তন: মানসিক অবস্থার পরিবর্তন, যেমন মেজাজের পরিবর্তন, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মনোযোগের অভাব ইত্যাদি লক্ষণ হতে পারে।

৫. শরীরের অঙ্গগুলোর দুর্বলতা: শরীরের কোনো একটি অংশ বা অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়া, যেমন হাত বা পায়ের দুর্বলতা, হাত বা পায়ের অনুভূতি কমে যাওয়া ইত্যাদি।

৬. কথা বলার সমস্যা: কথা বলতে সমস্যা হওয়া, যেমন কথা জড়ানো বা শব্দ উচ্চারণে সমস্যা হওয়া।

৭. সামঞ্জস্যহীনতা: হাঁটার সময় সামঞ্জস্য রাখতে সমস্যা হওয়া বা হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যাওয়া।

৮. দ্রুত ওজন কমে যাওয়া: অকারণে ওজন কমে যাওয়া।

বয়সভেদে মস্তিষ্কের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা

মস্তিষ্কের ক্যান্সার যেকোনো বয়সে হতে পারে, তবে কিছু নির্দিষ্ট বয়সের মানুষের এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি:

শিশু ও কিশোর

  • ০-১৯ বছর: শিশু ও কিশোরদের মধ্যে মস্তিষ্কের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি। শিশুদের শরীরের কোষ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ফলে মস্তিষ্কের কোষেও ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পাইলোসাইটিক অ্যাস্ট্রোসাইটোমা এবং মেডুলোব্লাস্টোমা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

প্রাপ্তবয়স্ক

  • ২০-৪০ বছর: এই বয়সে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম, তবে জার্ম সেল টিউমার এবং মেনিঙ্গিওমা ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।

মধ্যবয়স্ক

  • ৪১-৬০ বছর: এই বয়সে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গ্লিওব্লাস্টোমা এবং এনাপ্লাস্টিক অ্যাস্ট্রোসাইটোমা এই বয়সে বেশি দেখা যায়।

বৃদ্ধ

  • ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে: বৃদ্ধদের মধ্যে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। এই বয়সে মেনিঙ্গিওমা, গ্লিওব্লাস্টোমা এবং অন্যান্য ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বেশি দেখা যায়।

মস্তিষ্কের ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়গুলো কি কি?

মস্তিষ্কের ক্যান্সার প্রতিরোধের কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই, তবে কিছু অভ্যাস এবং জীবনধারা মেনে চললে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং সঠিক পুষ্টির মাধ্যমে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর কিছু উপায় এখানে আলোচনা করা হলো:

১. পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ

সুস্থ মস্তিষ্কের জন্য পুষ্টিকর খাদ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার মস্তিষ্কের কোষের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে:

  • সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, ব্রকলি, কেল ইত্যাদি সবুজ শাকসবজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা মস্তিষ্কের কোষকে রক্ষা করে।
  • ফলমূল: বিশেষ করে বেরি ফল, যেমন ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
  • পূর্ণ শস্য: ব্রাউন রাইস, ওটস, এবং কোয়ানোয়া খাওয়া উচিৎ।
  • প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য: মাছ, মুরগির মাংস, ডাল ইত্যাদি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

২. পর্যাপ্ত পানি পান

শরীরের সঠিক হাইড্রেশন বজায় রাখতে পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।

৩. নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম

নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা উচিত, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম ইত্যাদি।

৪. মানসিক চাপ কমানো

অতিরিক্ত মানসিক চাপ মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। মানসিক চাপ কমানোর জন্য ধ্যান, যোগব্যায়াম, এবং নিয়মিত বিরতি নেওয়া উপকারী।

৫. পর্যাপ্ত ঘুম

প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক বিশ্রাম পায় এবং পুনরায় শক্তি সংগ্রহ করে।

৬. বিষাক্ত পদার্থ থেকে দূরে থাকা

বিষাক্ত পদার্থ যেমন তামাক, অ্যালকোহল, এবং কেমিক্যাল থেকে দূরে থাকা উচিত। এসব পদার্থ মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করতে পারে।

৭. নিরাপদ রেডিয়েশন ব্যবহার

রেডিয়েশনের ব্যবহার সীমিত করা উচিত। প্রয়োজন ছাড়া রেডিয়েশন থেরাপি বা এক্স-রে করানো উচিত নয়।

৮. স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা

সঠিক ওজন বজায় রাখা মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

Categorized in:

Dietary and Nutrition,

Last Update: December 23, 2024