প্রস্টেট ক্যান্সার হলো পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থিতে সৃষ্ট একটি ক্যান্সার যা সাধারণত বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। প্রস্টেট হলো ছোট একটি গ্রন্থি যা পুরুষদের মূত্রথলি ও মূত্রনালী মধ্যে অবস্থান করে এবং বীর্য উৎপাদনে সহায়তা করে।

প্রস্টেট ক্যান্সার এর কারণ

প্রস্টেট ক্যান্সার এর সঠিক কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে সাধারণ কিছু কারণের জন্য এটি হতে পারে, যেমন:

  • বয়স: ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সের পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
  • পরিবারের ইতিহাস: যদি পূর্বে পরিবারের কেউ প্রস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • জেনেটিক পরিবর্তন: কিছু জেনেটিক পরিবর্তন প্রস্টেট ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
  • হারমোনাল পরিবর্তন: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, টেস্টোস্টেরন হারমোনের উচ্চ মাত্রা প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

প্রস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ

প্রস্টেট ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ নাও করতে পারে। তবে, কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে যা লক্ষ্য করলে ডাক্তার দেখানো উচিত:

  • মূত্রের সমস্যা: প্রস্টেট ক্যান্সার প্রস্টেট গ্রন্থির আকার বড় করে ফেলে, যার ফলে মূত্রনালীতে চাপ পড়ে। এর ফলে মূত্রত্যাগে সমস্যা হতে পারে, যেমন মূত্রত্যাগ করতে সময় লাগা, মূত্রের প্রবাহ কমে যাওয়া, ঘনঘন মূত্রত্যাগ ইত্যাদি।
  • রাতের বেলা ঘনঘন মূত্রত্যাগ: রাতে ঘনঘন মূত্রত্যাগ করতে ইচ্ছা হওয়া প্রস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
  • মূত্রে রক্ত: মূত্রে রক্ত দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ডাক্তার দেখানো উচিত। এটি প্রস্টেট ক্যান্সারের একটি সতর্কতা সংকেত হতে পারে।
  • বীর্যে রক্ত: বীর্যে রক্ত দেখা দিলে তা প্রস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা নির্দেশ করতে পারে।
  • মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা: মূত্রত্যাগের সময় বা মূত্রত্যাগের পর ব্যথা বা জ্বালাপোড়া অনুভব হলে তা প্রস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
  • মূত্রত্যাগ সম্পূর্ণ না হওয়া: মূত্রত্যাগ করার পরও মনে হতে পারে যে, মূত্র পুরোপুরি বের হয়নি। এটি প্রস্টেট ক্যান্সারের একটি লক্ষণ হতে পারে।
  • শরীরের অন্য স্থানে ব্যথা: প্রস্টেট ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য স্থানে যেমন, পিঠে, মেরুদণ্ডে বা হাড়ে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

বয়সভেদে প্রস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা

৪০ বছরের কম: এই বয়সে প্রস্টেট ক্যান্সার খুবই বিরল। সাধারণত ৪০ বছরের কম বয়সী পুরুষদের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে।

৪০-৫০ বছর: ৪০-৫০ বছরের মধ্যে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা বাড়ে, তবে তা এখনো তুলনামূলকভাবে কম।

৫০-৬০ বছর: ৫০ বছরের পর থেকে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি দ্রুত বেড়ে যায়। এই বয়সে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।

৬০ বছরের বেশি: ৬০ বছরের পরে প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এই বয়সে নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ ও প্রস্টেট পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় গুলো কি কি?

১. সুষম খাদ্যাভ্যাস

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:

  • ফলমূল ও সবজি: প্রচুর পরিমাণে ফলমূল ও সবজি খেলে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • শস্যজাতীয় খাবার: শস্যজাতীয় খাবার যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস, এবং বার্লি প্রস্টেটের জন্য উপকারী।
  • কম ফ্যাটযুক্ত খাবার: বেশি ফ্যাটযুক্ত খাবার প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই কম ফ্যাটযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া উচিত।

২. নিয়মিত ব্যায়াম

শারীরিক কার্যকলাপ প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে:

  • নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো ইত্যাদি ব্যায়ামগুলি উপকারী।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সুস্থ ওজন বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন: প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

৪. প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ

কিছু পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে:

  • ভিটামিন D: সূর্যালোকে পর্যাপ্ত সময় কাটিয়ে বা ভিটামিন D সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে শরীরের ভিটামিন D এর চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে।
  • ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: মাছ, বিশেষ করে স্যামন, ম্যাকারেল ইত্যাদিতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

প্রস্টেট পরীক্ষা: বয়স্ক পুরুষদের নিয়মিত প্রস্টেট পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষ করে যদি পরিবারের কারো প্রস্টেট ক্যান্সার ইতিহাস থাকে।

৬. তামাক এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকা

  • তামাক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন: ধূমপান ও তামাক চিবানো থেকে বিরত থাকা উচিত।
  • মদ্যপান কমিয়ে দিন: অতিরিক্ত মদ্যপান না করে নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে মদ্যপান করা উচিত।

প্রস্টেট ক্যান্সার নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ এবং সঠিক চিকিৎসা প্রস্টেট ক্যান্সার মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।

Categorized in:

Dietary and Nutrition,

Last Update: December 23, 2024