টেস্টিকুলার ক্যান্সার হলো টেস্টিসে বা অণ্ডকোষে হওয়া এক ধরনের ক্যান্সার। টেস্টিস হলো পুরুষদের প্রজনন অঙ্গ যা স্পার্ম ও টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদন করে। টেস্টিকুলার ক্যান্সার খুবই বিরল হলেও এটি সাধারণত যুবকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে।

টেস্টিকুলার ক্যান্সারের লক্ষণ গুলো কি কি?

টেস্টিকুলার ক্যান্সারের লক্ষণগুলো প্রথম অবস্থায় ছোট ছোট হতে পারে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:

অণ্ডকোষে একটি পিন্ড বা ফোলা: এটি সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। টেস্টিসে একটি শক্ত, পাথরের মতো পিন্ড অনুভব হতে পারে যা সাধারণত ব্যথা ছাড়া থাকে।

অণ্ডকোষে ব্যথা বা ভারী অনুভূতি: কখনও কখনও টেস্টিসে ব্যথা হতে পারে বা ভারী অনুভূতি হতে পারে।

অণ্ডকোষের আকৃতি বা আকারে পরিবর্তন: টেস্টিসের আকৃতি বা আকারে কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করলে তা হতে পারে ক্যান্সারের লক্ষণ।

নিম্ন তলপেটে বা কুঁচকিতে ব্যথা: কখনও কখনও নিম্ন তলপেটে বা কুঁচকিতে ব্যথা হতে পারে।

অণ্ডকোষে তরল জমা: টেস্টিসের চারপাশে হঠাৎ তরল জমা হতে পারে।

সাইনিসিস বা স্তনে পরিবর্তন: কিছু ক্ষেত্রে, টেস্টিকুলার ক্যান্সার টেস্টোস্টেরন উৎপাদন প্রভাবিত করে, যার ফলে স্তনে ব্যথা বা স্তন বৃদ্ধির মতো সমস্যা হতে পারে।

টেস্টিকুলার ক্যান্সার কিভাবে নির্ণয় করা হয়?

যদি আপনি উপরোক্ত কোন লক্ষণ দেখতে পান, তবে দেরি না করে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে টেস্টিকুলার ক্যান্সার নির্ণয় করতে পারেন।

টেস্টিকুলার ক্যান্সার কী কারণে হতে পারে?

যদিও টেস্টিকুলার ক্যান্সারের সঠিক কারণ নির্ণয় করা কঠিন, তবে কিছু কারণ এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। চলুন দেখে নেওয়া যাক কী কারণে টেস্টিকুলার ক্যান্সার হতে পারে:

জেনেটিক ফ্যাক্টর (বংশগত কারণ): পরিবারের মধ্যে কেউ যদি টেস্টিকুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে তার পুরুষ উত্তরাধিকারীদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।

অন্ডড্রপ না হওয়া টেস্টিস (ক্রিপ্টোরকিডিজম): জন্মের সময় যদি টেস্টিস স্বাভাবিক স্থানে না থাকে এবং পরে তা অপসারণ করা না হয়, তাহলে টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

টেস্টিসের অস্বাভাবিকতা: টেস্টিসের কোন ধরনের অস্বাভাবিকতা যেমন: কার্সিনোমা ইন সিটু, এই ধরনের সমস্যা থাকলে টেস্টিকুলার ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

হরমোনের প্রভাব: হরমোনের অস্বাভাবিকতা বা অস্বাভাবিক হরমোনের মাত্রা টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

আগে ক্যান্সার হওয়া: যদি একজন ব্যক্তির একবার টেস্টিকুলার ক্যান্সার হয়, তাহলে তার অন্য টেস্টিসেও এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

জাতিগত প্রভাব: কিছু জাতি বা বর্ণের মধ্যে টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি দেখা যায়, যেমন ককেশিয়ান পুরুষদের মধ্যে।

বয়সভেদে টেস্টিকুলার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা

১৫-৩৫ বছর: এই বয়সের যুবকদের মধ্যে টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। সাধারণত এই বয়সের পুরুষদের মধ্যে টেস্টিসের কোষ বিভাজনের হার বেশি থাকে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৩৬-৫০ বছর: এই বয়সে টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছুটা কমে যায়, তবে পুরোপুরি নয়। বিশেষ করে যদি আগে টেস্টিকুলার ক্যান্সার হয়ে থাকে, তবে পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৫০ বছর ঊর্ধ্বে: এই বয়সের পর টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়, কিন্তু পুরোপুরি নির্মূল হয় না। বয়সের সাথে সাথে টেস্টিসের কার্যক্ষমতা কমে যায়, যার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।

টেস্টিকুলার ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায় গুলো কি কি?

টেস্টিকুলার ক্যান্সার প্রতিরোধের কিছু কার্যকর উপায় নিচে তুলে ধরা হলো:

১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু বিশেষ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলো:

  • শাকসবজি ও ফলমূল: টেস্টিসের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিভিন্ন রঙের শাকসবজি ও ফলমূল গুরুত্বপূর্ণ। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, এবং মিনারেল থাকে যা শরীরের ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • গোটা শস্য: গোটা শস্য, যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস, এবং গোটা গমের পাউরুটি টেস্টিসের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
  • প্রোটিন: স্বাস্থ্যকর প্রোটিন, যেমন মাছ, মুরগির মাংস, ডাল, এবং বাদাম টেস্টিসের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।

২. নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শরীরকে ফিট রাখে না, এটি টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। ব্যায়াম শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং শরীরের হরমোন ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৩. নিয়মিত স্ব-পরীক্ষা

টেস্টিসের স্ব-পরীক্ষা টেস্টিকুলার ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে। মাসে একবার টেস্টিস পরীক্ষা করা উচিত, বিশেষ করে গোসল করার সময়। যদি কোন অস্বাভাবিক পিন্ড বা পরিবর্তন দেখা যায়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৪. ধূমপান এবং মদ্যপান পরিহার

ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর, এবং এটি টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। তাই ধূমপান এবং মদ্যপান পরিহার করা উচিত।

৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার শনাক্ত করা গেলে, এর চিকিৎসা সহজ হয় এবং আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৬. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

স্ট্রেস শরীরের হরমোন ব্যালেন্সে প্রভাব ফেলে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট টেকনিক, যেমন যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, এবং পর্যাপ্ত ঘুম, টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

৭. সঠিক পুষ্টি

সঠিক পুষ্টি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি এবং ই, সেলেনিয়াম এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরের কোষগুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

টেস্টিকুলার ক্যান্সার একটি গুরুতর রোগ হলেও, সচেতনতা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিরাময় করা সম্ভব। বয়সের ভিত্তিতে টেস্টিকুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি ভিন্ন হতে পারে, তবে যেকোনো বয়সেই এর লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। যদি আপনি টেস্টিসে কোন অস্বাভাবিক পরিবর্তন বা ব্যথা অনুভব করেন, তবে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা টেস্টিকুলার ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।

Categorized in:

Dietary and Nutrition,

Last Update: December 23, 2024