বহেরা, যার বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia bellirica, একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ ফল যা আয়ুর্বেদিক ঔষধে বহুল ব্যবহৃত হয়। এটি বড় গাছের ফল যা সাধারণত ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশে পাওয়া যায়। বহেরা ফলের খোসা, মাংস এবং বীজ সকলেই ঔষধি গুণাবলী সম্পন্ন।বহেরার প্রকারভেদবহেরা গাছের ফল সাধারণত এক ধরনের হয়, তবে এর ব্যবহার এবং প্রস্তুতির পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকারভেদ দেখা যায়। সাধারণত দুই ধরনের বহেরা দেখা যায়:১. কাঁচা বহেরা: এটি কাঁচা অবস্থায় সংগ্রহ করা হয় এবং সাধারণত তাজা অবস্থায় ব্যবহার করা হয়। কাঁচা বহেরা সরাসরি খাওয়া যায় না, এটি বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা হয়।২. শুকনো বহেরা: এটি পাকা ফল সংগ্রহ করে শুকিয়ে প্রস্তুত করা হয়। শুকনো বহেরা সাধারণত আয়ুর্বেদিক ঔষধে ব্যবহার করা হয়।নিয়মিত বহেরা খাওয়ার উপকারিতাবহেরা খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। নিয়মিত বহেরা খেলে যেসব উপকারিতা পাওয়া যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী: বহেরা হজম শক্তি বাড়ায় এবং বদহজম, গ্যাস এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাগুলি দূর করে। এটি প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ হিসেবে কাজ করে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে।ইমিউনিটি বাড়ায়: বহেরা প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে: বহেরা লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং টক্সিন মুক্ত করতে সাহায্য করে। এটি লিভারকে সুস্থ রাখে এবং লিভারের রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।চুলের যত্ন: বহেরা চুলের যত্নে বিশেষ কার্যকর। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে, চুল পড়া রোধ করে এবং খুশকির সমস্যা দূর করে।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: বহেরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।ত্বকের যত্ন: বহেরা ত্বকের যত্নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ত্বককে উজ্জ্বল এবং সুন্দর করে তোলে।
ভিটামিন সি: ইমিউনিটি বাড়ায় এবং শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।ট্যানিনস: প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।গ্যালিক অ্যাসিড: অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাবলী সম্পন্ন।ফ্ল্যাভোনয়েডস: শরীরের প্রদাহ কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।এলাগিট্যানিনস: ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
পরিমাণ: প্রতিদিন ১–২ গ্রাম বহেরা চূর্ণ অথবা বহেরার রস।ব্যবহার: বহেরার চূর্ণ মধু বা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। সরাসরি খাওয়ানোর থেকে এই পদ্ধতিতে তাদের পক্ষে হজম করা সহজ হবে।
পরিমাণ: প্রতিদিন ৩–৫ গ্রাম বহেরা চূর্ণ অথবা বহেরার রস।ব্যবহার: বহেরার চূর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে বা সরাসরি খাওয়া যেতে পারে। এটি তাদের হজম শক্তি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
পরিমাণ: প্রতিদিন ৫–১০ গ্রাম বহেরা চূর্ণ অথবা বহেরার রস।ব্যবহার: বহেরার চূর্ণ পানি বা মধুর সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরের টক্সিন দূর করতে এবং লিভারকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে।
পরিমাণ: প্রতিদিন ৩–৫ গ্রাম বহেরা চূর্ণ অথবা বহেরার রস।ব্যবহার: বহেরার চূর্ণ গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে।
সকালে খালি পেটে: বহেরা খালি পেটে খেলে এটি শরীরের টক্সিন দূর করতে সহায়ক। এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।রাতে ঘুমানোর আগে: বহেরা রাতে খেলে এটি অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
চূর্ণ আকারে: বহেরা চূর্ণ সাধারণত মধু বা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি হজম শক্তি বাড়ায় এবং শরীরকে সজীব রাখে।রস আকারে: বহেরার রস পান করা খুবই উপকারী। এটি সরাসরি খেলে অথবা অন্যান্য পানীয়ের সাথে মিশিয়ে পান করা যায়।
মধু: বহেরা চূর্ণ মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে এবং গলা ও শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে।গরম পানি: বহেরা চূর্ণ গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে এটি অন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।দুধ: বহেরা চূর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে এটি শরীরকে সজীব রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।আয়ুর্বেদিক চা: বহেরা চূর্ণ আয়ুর্বেদিক চায়ের সাথে মিশিয়ে পান করলে এটি শরীরকে শীতল এবং সজীব রাখে।
অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া: বহেরা অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এতে পেটের ব্যথা, ডায়রিয়া এবং অন্যান্য হজম সমস্যা হতে পারে।গর্ভাবস্থায়: গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বহেরা খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অতিরিক্ত বহেরা খাওয়া গর্ভাবস্থার সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।অ্যালার্জি: যারা বহেরার প্রতি অ্যালার্জিক, তাদের ক্ষেত্রে এটি খাওয়া উচিত নয়। এতে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।বিশেষ শারীরিক সমস্যা: যদি আপনার বিশেষ কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে যেমন কিডনি বা লিভারের সমস্যা, তাহলে বহেরা খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।