ব্যায়াম আমাদের শরীর এবং মনের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সঠিক পদ্ধতি না মেনে ব্যায়াম করলে শরীরের বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে। ব্যায়ামের কিছু সাধারণ ভুল পদ্ধতি এবং সেগুলি এড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. পর্যাপ্ত ওয়ার্ম-আপ না করা
অনেকেই ব্যায়াম শুরুর আগে যথেষ্ট ওয়ার্ম-আপ করেন না, যা পেশির আঘাত এবং জয়েন্টের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন, বিনা ওয়ার্ম-আপে সরাসরি ভার উত্তোলন শুরু করা বা উচ্চমাত্রার কার্ডিও ব্যায়াম করা।
এড়ানোর উপায়:
ব্যায়াম শুরুর আগে ৫-১০ মিনিট হালকা ওয়ার্ম-আপ করুন। হাঁটা, হালকা দৌড়ানো, বা স্ট্রেচিং এর মাধ্যমে পেশি এবং জয়েন্টগুলিকে প্রস্তুত করুন। যেমন, হালকা দৌড়ানো বা সোজা হয়ে হাত উঁচু করে স্ট্রেচিং করা। প্রতিদিন ব্যায়াম শুরুর আগে এই ধরনের ওয়ার্ম-আপ করুন।
২. সঠিক ফর্ম না মেনে ব্যায়াম করা
সঠিক ফর্ম না মেনে ব্যায়াম করলে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লাগতে পারে। যেমন, স্কোয়াট করার সময় হাঁটু সোজা না রাখা বা ডেডলিফট করার সময় পিঠ বাঁকা রাখা।
এড়ানোর উপায়:
সঠিক ফর্ম মেনে ব্যায়াম করুন। প্রয়োজন হলে একজন ফিটনেস ট্রেনারের পরামর্শ নিন। ধীরে ধীরে ব্যায়াম শিখুন এবং সঠিক ফর্ম বজায় রাখুন। যেমন, স্কোয়াট করার সময় পায়ের সোজা রেখা বজায় রাখুন এবং ডেডলিফট করার সময় পিঠ সোজা রাখুন।
৩. অতিরিক্ত ভার উত্তোলন
অতিরিক্ত ভার উত্তোলন করলে পেশির টিস্যু ফেটে যেতে পারে এবং জয়েন্টে আঘাত লাগতে পারে। যেমন, শুরুর দিকে বেশি ওজনের ডাম্বেল বা বারবেল উত্তোলন করা।
এড়ানোর উপায়:
প্রথমে হালকা ওজন দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে ওজন বাড়ান। আপনার শরীরের ক্ষমতা অনুযায়ী ভার উত্তোলন করুন। যেমন, প্রথমে ৫ কেজি ওজনের ডাম্বেল দিয়ে শুরু করুন এবং কয়েক সপ্তাহ পর ধীরে ধীরে ওজন বাড়ান।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়া
ব্যায়ামের পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে পেশির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে এবং শরীরের ক্লান্তি বাড়তে পারে।
এড়ানোর উপায়:
প্রতিদিন ব্যায়াম না করে সপ্তাহে ৪-৫ দিন ব্যায়াম করুন এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। পেশির পুনর্গঠনের জন্য বিশ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, সপ্তাহে তিনদিন ব্যায়াম করুন এবং দুইদিন বিশ্রাম নিন। বিশ্রামের দিনে হালকা স্ট্রেচিং বা যোগব্যায়াম করতে পারেন।
পর্যাপ্ত পানি পান না করা
ব্যায়ামের সময় এবং পরে পর্যাপ্ত পানি পান না করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে। যেমন, ব্যায়ামের সময় তৃষ্ণা না মিটানো।
এড়ানোর উপায়:
ব্যায়ামের আগে, ব্যায়ামের সময় এবং ব্যায়ামের পরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। যেমন, ব্যায়ামের ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করুন, ব্যায়ামের সময় প্রতি ১৫-২০ মিনিটে কয়েক সিপ পানি পান করুন, এবং ব্যায়ামের পর এক গ্লাস পানি পান করুন।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস না মেনে চলা
ব্যায়ামের পর সঠিক পুষ্টিকর খাবার না খেলে শরীরের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। যেমন, ব্যায়ামের পর প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার না খাওয়া।
এড়ানোর উপায়:
ব্যায়ামের পরে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খান। এটি পেশির পুনর্গঠন এবং শক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। যেমন, ব্যায়ামের পর একটি কলা, ডিম, এবং দই খেতে পারেন। এছাড়া, প্রোটিন শেক বা স্মুদি খাওয়া যেতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম না পাওয়া
পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে শরীরের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া এবং মেটাবলিজম বিঘ্নিত হতে পারে। যেমন, প্রতিদিন ৫-৬ ঘণ্টা ঘুমানো।
এড়ানোর উপায়:
প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। ঘুম শরীরের পুনর্গঠনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং একই সময়ে জাগুন। ঘুমানোর আগে মোবাইল বা টিভি দেখা এড়িয়ে চলুন।
অতিরিক্ত কার্ডিও করা
অতিরিক্ত কার্ডিও ব্যায়াম করলে পেশির ক্ষয় হতে পারে এবং শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে। যেমন, প্রতিদিন ১ ঘণ্টার বেশি কার্ডিও করা।
এড়ানোর উপায়:
সপ্তাহে ৩-৪ দিন ৩০-৪৫ মিনিট কার্ডিও ব্যায়াম করুন। এর সাথে শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়ামও যুক্ত করুন। যেমন, প্রতিদিন ৩০ মিনিটের জন্য দৌড়ানো বা সাইক্লিং করুন এবং সপ্তাহে ২ দিন শক্তি বৃদ্ধির ব্যায়াম (যেমন, স্কোয়াট, পুশ আপ) করুন।
ব্যায়াম করার সময় সঠিক পদ্ধতি মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল পদ্ধতি মেনে ব্যায়াম করলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। সঠিক ব্যায়ামের পদ্ধতি, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে আমরা সুস্থ ও সক্রিয় থাকতে পারি। তাই, ব্যায়ামের সময় এই ভুলগুলি এড়িয়ে চলুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।