স্তন ক্যান্সার হল স্তনের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং স্বাভাবিকভাবে বিভাজিত না হওয়া, যা স্তনের টিস্যুতে টিউমার বা গুটির সৃষ্টি করে। এটি একটি মারাত্মক রোগ যা প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা গেলে সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়। স্তন ক্যান্সার মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ক্যান্সারগুলির মধ্যে একটি। এটি সাধারণত স্তনের দুধের নালী (ডাক্ট) বা দুধ উৎপাদনকারী লোবুল (লোব) থেকে শুরু হয়।

স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ

স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি বুঝতে পারলে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সহজ হয়। কিছু সাধারণ লক্ষণ হল:

  • স্তনের মধ্যে বা স্তনের পাশে একটি গুটি বা শক্ত আবরণ অনুভব করা।
  • স্তনের আকার বা আকৃতি পরিবর্তন হওয়া।
  • স্তনের চামড়ায় লালচে বা গরম ভাব।
  • স্তনের চামড়ায় গর্ত বা ডিম্পল পড়া।
  • স্তনের নিপলের রং পরিবর্তন হওয়া বা নিপল থেকে তরল পদার্থ নির্গত হওয়া।
  • নিপল ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া।

কোন কোন বয়সে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি নির্দিষ্ট কোনও বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তবে কিছু বয়সের মহিলাদের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। আসুন বিস্তারিতভাবে দেখি:

কিশোরী ও অল্পবয়সী মহিলারা (২০-৩০ বছর)

কিশোরী ও অল্পবয়সী মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি সাধারণত কম থাকে। তবে কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে জেনেটিক মিউটেশন এবং পারিবারিক ইতিহাসের কারণে অল্পবয়সী মহিলারাও ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।

মধ্যবয়সী মহিলারা (৩০-৫০ বছর)

এই বয়সের মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। কর্মজীবন, মানসিক চাপ, অনিয়মিত জীবনযাপন এবং হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে এই বয়সে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া যারা আগে কখনো জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খেয়েছেন বা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করেছেন তাদের ঝুঁকিও কিছুটা বেশি।

বৃদ্ধ বয়সী মহিলারা (৫০+ বছর)

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। এই বয়সে মহিলাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মেনোপজ পরবর্তী মহিলাদের মধ্যে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া, যাদের পারিবারিক ইতিহাসে স্তন ক্যান্সার আছে তাদের ঝুঁকি আরও বেশি।

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার কারণসমূহ

স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যা জেনেটিক, পরিবেশগত এবং জীবন যাপন এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে।

জেনেটিক কারণ

পারিবারিক ইতিহাস: যাদের মা, বোন বা মেয়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ঝুঁকি বেশি।

জেনেটিক মিউটেশন: BRCA1 এবং BRCA2 জিনের মিউটেশন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

পরিবেশগত কারণ

রেডিয়েশন এক্সপোজার: যারা কিশোরী বা যুবতী বয়সে রেডিয়েশন থেরাপি গ্রহণ করেছেন তাদের ঝুঁকি বেশি।

পরিবেশ দূষণ: দূষিত পরিবেশে বসবাস করা, ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে থাকা ইত্যাদি ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

জীবন যাপন সম্পর্কিত কারণ

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ।

শারীরিক কার্যকলাপের অভাব: যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন না তাদের ঝুঁকি বেশি।

ধূমপান ও মদ্যপান: ধূমপান এবং মদ্যপান স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

অতিরিক্ত ওজন: মেনোপজ পরবর্তী মহিলাদের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়

স্তন ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

শাক-সবজি ও ফলের অধিক পরিমাণে গ্রহণ: শাক-সবজি ও ফলের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

মাছ ও স্যামন: মাছ ও স্যামনের মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং শরীরের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়, যা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকা

ধূমপান এবং মদ্যপান স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই, এই অভ্যাসগুলি পরিত্যাগ করা উচিত।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং মেমোগ্রাফি করার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব।

স্তন ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য কিনা

প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করলে স্তন ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য হতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সচেতনতা, এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ স্তন ক্যান্সার নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্তন ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ হলেও, সঠিকভাবে এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করলে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। সচেতনতা এবং সতর্কতা আমাদের জীবন বাঁচাতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

Categorized in:

Dietary and Nutrition,