ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার কী?

ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার নারীদের এক ধরনের ক্যান্সার, যা যোনিপথের কোষ থেকে শুরু হয়। এটি সাধারণত খুব বিরল একটি ক্যান্সার। যোনিপথের কোষে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হওয়ার ফলে এই ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। এটি শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

কী কারণে ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার হতে পারে?

ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার খুবই বিরল একটি ক্যান্সার, তবে এর কিছু নির্দিষ্ট কারণ এবং ঝুঁকি ফ্যাক্টর রয়েছে। আসুন দেখি কী কী কারণে ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার হতে পারে:

এইচপিভি (HPV) সংক্রমণ:

এইচপিভি হল এক ধরনের ভাইরাস যা যৌন সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। এই ভাইরাসটি যোনি, গলা, এবং অন্যান্য অংশে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।

এইচপিভি সংক্রমণ ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ।

বয়স:

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এর ঝুঁকি বেশি।

ধূমপান:

ধূমপান ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যারা ধূমপান করেন তাদের মধ্যে ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।

ডিএস (DES) ব্যবহারের ইতিহাস:

ডাইইথাইলস্টিলবেসট্রল (ডিএস) নামক ওষুধটি ১৯৪০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত গর্ভবতী মহিলাদের ব্যবহৃত হত। যারা এই ওষুধ ব্যবহার করেছেন তাদের কন্যাদের মধ্যে ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।

ইমিউন সিস্টেম দুর্বল:

ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে বা এইচআইভি/এইডসের মতো রোগে আক্রান্ত হলে ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।

যোনিপথে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ:

দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ বা সংক্রমণ ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

লক্ষণসমূহ

ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণগুলি খুব স্পষ্ট নাও হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা লক্ষ্য করা যেতে পারে:

  • অস্বাভাবিক যোনি থেকে রক্তপাত: মাসিকের বাইরে বা রজঃনিবৃত্তির পর রক্তপাত হওয়া।
  • যোনিতে ব্যথা: যৌনমিলনের সময় বা পরে যোনিতে ব্যথা হওয়া।
  • অস্বাভাবিক স্রাব: গন্ধযুক্ত বা অস্বাভাবিক স্রাব।
  • পেলভিক ব্যথা: তলপেটে বা পেলভিক অঞ্চলে ব্যথা।

কোন কোন বয়সের মানুষের ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, বয়সভেদে আলোচনা

ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার সাধারণত ৫০ বছরের বেশি বয়সের নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আসুন বয়সভেদে ঝুঁকি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি:

৩০ বছরের নিচে:

এই বয়সের নারীদের মধ্যে ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের ঝুঁকি খুবই কম। তবে যেসব নারীরা ডিএস (DES) এর কারণে ঝুঁকিতে আছেন তাদের এই বয়সে ক্যান্সার হতে পারে।

৩০-৫০ বছর:

এই বয়সের নারীদের মধ্যে কিছুটা ঝুঁকি থাকে, তবে তুলনামূলকভাবে কম। যদি কেউ এইচপিভি সংক্রমণের শিকার হন বা ধূমপায়ী হন তাহলে ঝুঁকি বাড়তে পারে।

৫০-৬০ বছর:

এই বয়সের নারীদের মধ্যে ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে শুরু করে। এই বয়সের পর থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।

৬০ বছরের ঊর্ধ্বে:

৬০ বছরের ঊর্ধ্বে নারীদের মধ্যে ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এই বয়সে নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার এবং যোনির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়

ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার খুবই বিরল এবং সাধারণত বয়স্ক নারীদের মধ্যে দেখা যায়। তবে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ মেনে চললে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আসুন দেখে নেই ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার প্রতিরোধের কিছু কার্যকর উপায়:

১. এইচপিভি (HPV) ভ্যাকসিন গ্রহণ

এইচপিভি ভ্যাকসিন ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

  • কীভাবে কাজ করে: এই ভ্যাকসিনটি শরীরে এইচপিভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
  • কারা নিতে পারেন: ১১-১২ বছর বয়সের মেয়েদের জন্য এটি সবচেয়ে কার্যকর, তবে ২৬ বছর বয়স পর্যন্ত নেওয়া যেতে পারে।

২. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

  • প্যাপ স্মিয়ার: প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট যোনি এবং জরায়ুর ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
  • এইচপিভি টেস্ট: এই টেস্টটি এইচপিভি সংক্রমণ শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়।

৩. ধূমপান পরিহার

ধূমপান অনেক ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়, যার মধ্যে ভ্যাজাইনাল ক্যান্সারও রয়েছে।

  • ধূমপান বন্ধের উপকারিতা: ধূমপান বন্ধ করলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

৪. সুরক্ষিত যৌনমিলন

এইচপিভি সংক্রমণ থেকে বাঁচতে সুরক্ষিত যৌনমিলন গুরুত্বপূর্ণ।

  • কনডম ব্যবহার: কনডম ব্যবহার করলে এইচপিভি এবং অন্যান্য যৌনবাহিত রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
  • সঙ্গীর সংখ্যা সীমিত রাখা: সঙ্গীর সংখ্যা কমালে যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি কমে।

৫. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

সঠিক পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ভ্যাজাইনাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

  • ফল ও সবজি: প্রচুর ফল ও সবজি খেলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি পায় যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
  • সম্পূর্ণ শস্য: ব্রাউন রাইস, ওটস ইত্যাদি সম্পূর্ণ শস্য খাওয়া উচিত।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য: মাছ, ডাল, বাদাম ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া।

৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

  • শারীরিক পরিশ্রম: নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করা উচিত।
  • সুষম খাদ্যাভ্যাস: সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি।

৭. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা

একটি শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

  • পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
  • মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ কমাতে যোগব্যায়াম বা ধ্যান করা যেতে পারে।

৮. ডিএস (DES) এর ইতিহাস জানা

যারা ডিএস (DES) নামক ওষুধের ব্যবহারের কারণে ঝুঁকিতে আছেন তাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।

  • পরামর্শ: এই ওষুধের ইতিহাস জানলে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

Categorized in:

Dietary and Nutrition,

Last Update: December 23, 2024