ব্যায়াম আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তবে যদি সঠিকভাবে না করা হয়, তবে এর থেকে নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। এখানে আমি ব্যায়ামের কিছু ক্ষতিকারক দিক নিয়ে আলোচনা করব এবং একজন পুষ্টিবিদের দৃষ্টিকোন থেকে কীভাবে এই সমস্যাগুলি এড়ানো যায় তা জানাব।

অতিরিক্ত ব্যায়াম করার কুফল:

অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে শরীরের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। পেশি, জয়েন্ট এবং হাড়ের উপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করলে এগুলির ক্ষতি হতে পারে। পেশির টিস্যু ফেটে যেতে পারে, জয়েন্টে ব্যথা এবং ফোলা হতে পারে। এছাড়া হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।

কীভাবে এড়ানো যায়:

প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে ব্যায়াম করুন। একজন পুষ্টিবিদ বা ফিটনেস ট্রেনারের পরামর্শ নিয়ে আপনার জন্য উপযুক্ত ব্যায়ামের সময় ও ধরন নির্ধারণ করুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন বিশ্রাম নিন।

সঠিক পদ্ধতি না মানার ক্ষতি:

সঠিক পদ্ধতি না মানলে ব্যায়াম থেকে ক্ষতি হতে পারে। যেমন, ভার উত্তোলনের সময় ভুল ভঙ্গিমায় দাঁড়ালে পিঠ বা কোমরে ব্যথা হতে পারে। ভুলভাবে স্কোয়াট করলে হাঁটুতে সমস্যা হতে পারে। ভুলভাবে কার্ডিও করলে হৃদযন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে।

কীভাবে এড়ানো যায়:

প্রথমে একটি যোগ্য ফিটনেস ট্রেনারের কাছ থেকে সঠিক ব্যায়ামের পদ্ধতি শিখুন। ধীরে ধীরে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়ান এবং প্রতিটি ব্যায়াম সঠিকভাবে করার চেষ্টা করুন।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়া:

ব্যায়ামের পর শরীরের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। যদি পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নেওয়া হয়, তবে এই প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে। ফলে পেশির পুনর্গঠন ঠিকমতো হয় না, যা পরে পেশির ক্ষতি এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।

কীভাবে এড়ানো যায়:

প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান। ব্যায়ামের পর পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন এবং পেশিকে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সুযোগ দিন।

অপুষ্টির কারণে ক্ষতি

সঠিক খাদ্যাভ্যাস না থাকলে ব্যায়ামের ফলে অপুষ্টি হতে পারে। ব্যায়ামের পর শরীরের প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং অন্যান্য পুষ্টির প্রয়োজন হয়। যদি এই পুষ্টিগুলি ঠিকমতো না পাওয়া যায়, তবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।

কীভাবে এড়ানো যায়:

একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। ব্যায়ামের আগে ও পরে সঠিক পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। ব্যায়ামের পরে পুষ্টিকর খাবার এর তালিকা নিয়ে বিস্তারিত লেখাটি পড়ুন।

ডিহাইড্রেশন হতে পারে

ব্যায়ামের সময় শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। যদি পর্যাপ্ত পানি না পান করা হয়, তবে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এর ফলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে।

কীভাবে এড়ানো যায়:

ব্যায়ামের আগে, ব্যায়ামের সময় এবং ব্যায়ামের পরে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এছাড়া ফ্রুট জুস, নারকেলের পানি, বা ইলেকট্রোলাইট পানীয়ও পান করতে পারেন।

মনোযোগের অভাবে বিপদ:

ব্যায়ামের সময় মনোযোগের অভাব থাকলে বিভিন্ন ধরনের আঘাতের সম্ভাবনা থাকে। যেমন, ভার উত্তোলনের সময় মনোযোগ না দিলে ভার পড়ে গিয়ে আঘাত লাগতে পারে। এছাড়া ট্রেডমিল বা অন্য কোনো মেশিনে ব্যায়াম করার সময় মনোযোগ না দিলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

কীভাবে এড়ানো যায়:

ব্যায়ামের সময় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন। প্রয়োজনে ব্যায়ামের সময় মোবাইল বা অন্যান্য চিন্তা ভাবনা থেকে দূরে থাকুন।

সঠিক পোশাক যন্ত্রপাতি না ব্যবহার করা:

সঠিক ব্যায়ামের পোশাক ও যন্ত্রপাতি না ব্যবহার করলে শরীরে আঘাত লাগার সম্ভাবনা থাকে। যেমন, দৌড়ানোর সময় সঠিক জুতা না পরলে পায়ে আঘাত লাগতে পারে বা পা ব্যথা হতে পারে। ভার উত্তোলনের সময় সঠিক বেল্ট না পরলে কোমরে আঘাত লাগতে পারে।

কীভাবে এড়ানো যায়:

আপনার সাথে যায় এমন ব্যায়ামের পোশাক ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করুন। ব্যায়ামের জন্য বিশেষভাবে তৈরি জুতা, পোশাক, এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করুন।

ব্যায়াম আমাদের শরীর এবং মনের জন্য অত্যন্ত উপকারী হলেও, সঠিক পদ্ধতি না মানলে বা অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে এর ক্ষতিকারক দিকও আছে। একজন পুষ্টিবিদের দৃষ্টিকোন থেকে, সঠিকভাবে ব্যায়াম করা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়ামের সময় মনোযোগী হওয়া এবং সঠিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা উচিত। সব মিলিয়ে, যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যায়াম করলে আমরা এর সর্বোচ্চ উপকার পাব এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে পারব।

Categorized in:

Dietary and Nutrition,