আমরা সবাই জানি যে পাকস্থলীর ক্যান্সার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি নিরাময়যোগ্য হলেও, প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা অনেক সহজ হয়ে যায়।
পাকস্থলীর ক্যান্সার কি?
পাকস্থলীর ক্যান্সার হল একটি মারাত্মক রোগ যা পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ক্যান্সার সেল গঠন করে। এটি মূলত পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ আবরণী কোষে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে পাকস্থলীর অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে পাকস্থলীর ক্যান্সারের লক্ষণগুলো সাধারণত তেমনভাবে চোখে পড়ে না, তবে কিছু লক্ষণ থাকতে পারে যা অবহেলা করা উচিত নয়।
অপচনশীল হজম সমস্যা: পাকস্থলীর ক্যান্সারের শুরুর দিকে হজম সমস্যা হতে পারে। যেকোনো খাবার খাওয়ার পর যদি অস্বাভাবিক পেটব্যথা হয় বা বার বার গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হয়, তাহলে এটি একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে।
বমি বমি ভাব: খাবার খাওয়ার পর বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ হতে পারে।
ক্ষুধামান্দ্য: হঠাৎ করে ক্ষুধা কমে যাওয়া বা খাবারের প্রতি অনীহা তৈরি হওয়া এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
ওজন কমে যাওয়া: কোনো কারণ ছাড়াই দ্রুত ওজন কমে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হতে পারে।
উন্নত পর্যায়ের লক্ষণ
যদি প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণগুলো অবহেলা করা হয়, তাহলে ক্যান্সার উন্নত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে এবং কিছু গুরুতর লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
পেটব্যথা বৃদ্ধি: পাকস্থলীর ক্যান্সার উন্নত পর্যায়ে পৌঁছালে পেটের ব্যথা বৃদ্ধি পায় এবং এটি ক্রমাগত হতে থাকে।
রক্তবমি: পাকস্থলীতে ক্যান্সার কোষের বিস্তার হলে রক্তবমি হতে পারে।
মলদ্বারে রক্তপাত: মলত্যাগের সময় রক্তপাত বা কালো মল দেখা দিতে পারে।
খাবার গিলতে কষ্ট: পাকস্থলীর ক্যান্সারের কারণে খাবার গিলতে কষ্ট হতে পারে এবং এটি ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
বয়সভেদে পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা
পাকস্থলীর ক্যান্সার যে কোনো বয়সের মানুষের হতে পারে, তবে কিছু নির্দিষ্ট বয়সে এর ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। নিচে বয়সভেদে পাকস্থলীর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:
১. শিশু ও কিশোর-কিশোরী
যদিও শিশুদের মধ্যে পাকস্থলীর ক্যান্সার খুব বিরল, তবে কিছু নির্দিষ্ট জিনগত বা জন্মগত সমস্যার কারণে এদের মধ্যে এই ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকতে পারে।
২. তরুণ-তরুণী (২০-৩০ বছর)
এই বয়সের মধ্যে পাকস্থলীর ক্যান্সারের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে কিছু নির্দিষ্ট রোগ যেমন অ্যাটাক্সিয়া-টেলাঙ্গিয়েক্টাসিয়া বা পারিবারিক অ্যাডেনোমাটাস পলিপোসিস থাকলে ঝুঁকি বাড়তে পারে।
৩. মধ্যবয়সী প্রাপ্তবয়স্ক (৩০-৫০ বছর)
এই বয়সে পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস এবং ধূমপান বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের মতো অভ্যাসগুলো এই ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৪. বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্ক (৫০ বছর এবং তদূর্ধ্ব)
এই বয়সের মানুষের মধ্যে পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বেশিরভাগ পাকস্থলীর ক্যান্সারের রোগী ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সের হয়।
ঝুঁকির কারণসমূহ
পারিবারিক ইতিহাস: যদি আপনার পরিবারের কেউ আগে পাকস্থলীর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে, তাহলে আপনার ঝুঁকি বেশি।
জেনেটিক ফ্যাক্টর: কিছু জেনেটিক সমস্যা যেমন Lynch syndrome বা HNPCC থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
খাদ্যাভ্যাস: প্রক্রিয়াজাত এবং সংরক্ষিত খাবার বেশি খেলে ঝুঁকি বাড়ে।
ধূমপান এবং অ্যালকোহল: ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানের কারণে পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ইনফেকশন: পাকস্থলীতে এই ব্যাকটেরিয়া থাকলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
যদিও পাকস্থলীর ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়, তবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে এর ঝুঁকি কমানো যেতে পারে:
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: আপনার খাদ্য তালিকায় প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন: প্রক্রিয়াজাত এবং সংরক্ষিত খাবার কম খান, কারণ এ ধরনের খাবারে কেমিক্যাল এবং প্রিজারভেটিভ থাকে যা ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
ধূমপান এবং অ্যালকোহল ত্যাগ করুন: ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পর্যাপ্ত জল পান করুন: প্রতিদিন পর্যাপ্ত জল পান করুন যা পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
পাকস্থলীর ক্যান্সার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, কিন্তু সচেতনতা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এর ঝুঁকি কমানো সম্ভব। প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান। আপনার স্বাস্থ্য আপনার হাতে, তাই আজ থেকেই সঠিক জীবনধারা মেনে চলুন এবং সুস্থ থাকুন।