আজকের দিনে আমরা অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করি, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার (যেমন, পিঠের ব্যথা, কোমরের ব্যথা, পেশির দুর্বলতা) সৃষ্টি হতে পারে। তাই, সঠিক ব্যায়াম করে এই সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য কিছু কার্যকর ব্যায়ামের পদ্ধতি এবং উদাহরণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১. পিঠ ও কোমরের ব্যায়াম

ব্যাক এক্সটেনশন কীভাবে করবেন:

ব্যাক এক্সটেনশন পিঠের পেশিগুলিকে শক্তিশালী করে এবং কোমরের ব্যথা কমায়।

উদাহরণ:

মেঝেতে পেটের উপর শুয়ে থাকুন, হাত দুটো সামনে বাড়িয়ে রাখুন। তারপর ধীরে ধীরে মাথা এবং বুক উপরে উঠান যতক্ষণ না আপনি পিঠে টান অনুভব করছেন। এই অবস্থানে কয়েক সেকেন্ড ধরে থাকুন এবং তারপর ধীরে ধীরে নিচে নামুন। প্রতিদিন ১০-১৫ বার এই ব্যায়ামটি করুন।

ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ কীভাবে করবেন:

ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ মেরুদণ্ডের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করে এবং পিঠের ব্যথা কমায়।

উদাহরণ:

মেঝেতে হাঁটু ও হাতের উপর ভর দিয়ে থাকুন। শ্বাস নিতে নিতে পিঠ উঁচু করে কুঁজো হন (ক্যাট পোজ), এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পিঠ নিচু করে মাথা উপরে তুলুন (কাউ পোজ)। এই প্রক্রিয়াটি ১০-১৫ বার পুনরাবৃত্তি করুন।

২. ঘাড় ও কাঁধের ব্যায়াম

নেক স্ট্রেচ কীভাবে করবেন:

নেক স্ট্রেচ ঘাড়ের পেশিগুলিকে শিথিল করে এবং ঘাড়ের ব্যথা কমায়।

উদাহরণ:

সোজা হয়ে বসুন বা দাঁড়ান। ধীরে ধীরে মাথা একপাশে ঝোঁকান যতক্ষণ না আপনি ঘাড়ের পেশিতে টান অনুভব করছেন। এই অবস্থানে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে থাকুন এবং তারপর অন্য পাশে পুনরাবৃত্তি করুন। প্রতিদিন ২-৩ বার এই ব্যায়ামটি করুন।

শোল্ডার রোলস কীভাবে করবেন:

শোল্ডার রোলস কাঁধের পেশিগুলিকে শিথিল করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

উদাহরণ:

সোজা হয়ে বসুন বা দাঁড়ান। ধীরে ধীরে কাঁধগুলি পিছনে ঘোরান এবং তারপর সামনের দিকে ঘোরান। প্রতিটি দিকে ১০-১৫ বার এই ব্যায়ামটি করুন।

৩. হাত ও কব্জির ব্যায়াম

রিস্ট স্ট্রেচ কীভাবে করবেন:

রিস্ট স্ট্রেচ হাতের এবং কব্জির পেশিগুলিকে শিথিল করে এবং ব্যথা কমায়।

উদাহরণ:

সোজা হয়ে বসুন বা দাঁড়ান। এক হাত সামনে বাড়িয়ে অন্য হাত দিয়ে কব্জি ধরে ধীরে ধীরে নিচের দিকে টানুন। এই অবস্থানে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে থাকুন এবং তারপর অন্য হাতে পুনরাবৃত্তি করুন। প্রতিদিন ২-৩ বার এই ব্যায়ামটি করুন।

ফিঙ্গার এক্সটেনশন কীভাবে করবেন:

ফিঙ্গার এক্সটেনশন ব্যায়াম আঙুলের পেশিগুলিকে শিথিল করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

উদাহরণ:

সোজা হয়ে বসুন বা দাঁড়ান। হাতের আঙুলগুলি মুঠো করে ধরে রাখুন, তারপর ধীরে ধীরে আঙুলগুলি ছাড়ুন এবং ছড়িয়ে দিন। ১০-১৫ বার এই প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।

৪. পা ও পায়ের পেশির ব্যায়াম

লেগ লিফটস কীভাবে করবেন:

লেগ লিফটস পায়ের পেশিগুলিকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

উদাহরণ:

চেয়ারে বসে এক পা সোজা করে উপরে তুলুন যতক্ষণ না আপনার উরু মাটির সমান্তরাল হয়। এই অবস্থানে কয়েক সেকেন্ড ধরে থাকুন এবং তারপর ধীরে ধীরে নিচে নামুন। প্রতিটি পায়ে ১০-১৫ বার এই ব্যায়ামটি করুন।

টিপটো স্ট্যান্ড কীভাবে করবেন:

টিপটো স্ট্যান্ড পায়ের পেশিগুলিকে শক্তিশালী করে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

উদাহরণ:

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে উপরে উঠান। কয়েক সেকেন্ড ধরে থাকুন এবং তারপর ধীরে ধীরে নিচে নামুন। ১০-১৫ বার এই ব্যায়ামটি পুনরাবৃত্তি করুন।

৫. সারা শরীরের স্ট্রেচিং

ফুল বডি স্ট্রেচ কীভাবে করবেন:

ফুল বডি স্ট্রেচ পুরো শরীরের পেশিগুলিকে শিথিল করে এবং ফ্লেক্সিবিলিটি বৃদ্ধি করে।

উদাহরণ:

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাত দুটো উপরে তুলুন এবং ধীরে ধীরে শরীরকে সামনের দিকে ঝুঁকান যতক্ষণ না আপনি পায়ের আঙ্গুল স্পর্শ করতে পারেন। এই অবস্থানে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে থাকুন এবং ধীরে ধীরে ফিরে আসুন। প্রতিদিন ২-৩ বার এই ব্যায়ামটি করুন।

সাইড স্ট্রেচ কীভাবে করবেন:

সাইড স্ট্রেচ পাশের পেশিগুলিকে শিথিল করে এবং ফ্লেক্সিবিলিটি বৃদ্ধি করে।

উদাহরণ:

সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাত দুটো উপরে তুলুন এবং ধীরে ধীরে একপাশে ঝুঁকান যতক্ষণ না আপনি পাশের পেশিতে টান অনুভব করছেন। এই অবস্থানে ২০-৩০ সেকেন্ড ধরে থাকুন এবং তারপর অন্য পাশে পুনরাবৃত্তি করুন। প্রতিদিন ২-৩ বার এই ব্যায়ামটি করুন।

৬. গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস

প্রাণায়াম কীভাবে করবেন:

প্রাণায়াম বা গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যায়াম মনের প্রশান্তি আনে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

উদাহরণ:

সোজা হয়ে বসুন বা দাঁড়ান। ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং কয়েক সেকেন্ড ধরে রেখে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। ৫-১০ মিনিট এই প্রক্রিয়াটি করুন।

৭. ছোট বিরতি নিয়ে হাঁটা

ওয়াকিং ব্রেক কীভাবে করবেন:

প্রতি ঘন্টায় একবার ছোট বিরতি নিয়ে হাঁটুন। এটি শরীরের পেশিগুলিকে সক্রিয় রাখে এবং রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।

উদাহরণ:

আপনার কাজের জায়গায় প্রতি ঘন্টায় ৫-১০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে অফিসের করিডোরে বা আপনার বাড়ির আশপাশে হাঁটতে পারেন।

উপসংহার

দীর্ঘ সময় বসে কাজ করলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে, সঠিক ব্যায়াম করলে এবং নিয়মিত বিরতি নিয়ে চলাফেরা করলে এই সমস্যাগুলি কমানো সম্ভব। সঠিক ব্যায়ামের পদ্ধতি এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যক্রম দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করুন এবং সুস্থ ও সক্রিয় থাকুন।

Categorized in:

Dietary and Nutrition,