জরায়ু মুখের ক্যান্সার, যাকে সার্ভিকাল ক্যান্সারও বলা হয়, এটা হল জরায়ুর নীচের অংশে, যা যোনির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, সেখানের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ক্যান্সার কোষের সৃষ্টি। এই ক্যান্সার সাধারণত হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) নামক ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয়। সময়মতো নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা গেলে এই ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য হতে পারে।
কোন বয়সের মহিলারা জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে
জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি নির্দিষ্ট কোন বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তবে বয়সের সাথে সাথে মহিলাদের মধ্যে এই ঝুঁকি বেশি দেখা যায়। আসুন বিস্তারিতভাবে দেখি:
কিশোরী ও অল্পবয়সী মহিলারা (২০-৩০ বছর)
এই বয়সের মহিলাদের মধ্যে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি কম হলেও, যদি তারা অতিরিক্ত যৌন সক্রিয় থাকে এবং একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে তাদের এই ঝুঁকি কিছুটা বাড়তে পারে। এছাড়া, যারা প্রথম যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন অল্পবয়সে, তাদের মধ্যে এই ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
মধ্যবয়সী মহিলারা (৩০-৫০ বছর)
এই বয়সের মহিলাদের মধ্যে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। যারা যৌন রোগে আক্রান্ত বা HPV সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া, যারা ধূমপান করেন এবং যারা নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা করান না, তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে।
বৃদ্ধ বয়সী মহিলারা (৫০+ বছর)
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই বয়সের মহিলাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা আগে কখনো প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা করাননি বা দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করা থেকে বিরত থেকেছেন, তাদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি।
জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর কারণসমূহ
জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যা জেনেটিক, পরিবেশগত, এবং জীবনধারা সম্পর্কিত হতে পারে।
জেনেটিক কারণ
পারিবারিক ইতিহাস: যদি কোনও নিকটাত্মীয় জরায়ু মুখের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তবে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
জেনেটিক মিউটেশন: কিছু জেনেটিক পরিবর্তন জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পরিবেশগত কারণ
HPV সংক্রমণ: এই ভাইরাসটি জরায়ু মুখের ক্যান্সারের প্রধান কারণ। যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয়।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ: যৌন স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতার অভাবও ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
জীবনধারা সম্পর্কিত কারণ
ধূমপান: ধূমপানের কারণে শরীরে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ প্রবেশ করে, যা জরায়ু মুখের কোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
অতিরিক্ত যৌন সক্রিয়তা: যারা একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন তাদের মধ্যে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি।
জরায়ু মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
জরায়ু মুখের ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলেও, কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
শাক-সবজি ও ফল: প্রচুর শাক-সবজি ও ফলের মধ্যে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: মাংস, ডিম, দুধ, এবং বাদামের মধ্যে থাকা প্রোটিন শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা জরায়ু মুখের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলি নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
HPV ভ্যাকসিন
HPV ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, যা জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
যৌন স্বাস্থ্য এবং পরিচ্ছন্নতা
যৌন সম্পর্কের সময় সুরক্ষিত এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
জরায়ু মুখের ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য কিনা
প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করলে জরায়ু মুখের ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য হতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সচেতনতা, এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ জরায়ু মুখের ক্যান্সার নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জরায়ু মুখের ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ হলেও, সঠিকভাবে এবং সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করলে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। সচেতনতা এবং সতর্কতা আমাদের জীবন বাঁচাতে পারে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।